বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন
রাশিম মোল্লা : কুয়েতে বাংলাদেশের দূতাবাস ভাংচুরের পর থেকে ভয় আর আতঙ্ক দিন কাটছে লেসকো কোম্পানীর ৩০০ প্রবাসীর। ভাঙচুরের তালিকায় অনেকের নাম থাকায় প্রশাসন তাদেরকে আড়চোখে দেখছে। ওই তালিকায় এখন নতুন নতুন নাম ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। তালিকায় যাদের নাম ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদেরকে কুয়েতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করছে ।
এদিকে গত বুধবার কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) ও দূতালয় প্রধান মো. আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দূতাবাসে সংঘঠিত অনাকাঙ্খিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত্রে ঘটনাস্থ থেকে গ্রেপ্তারকৃত ২০৯ শ্রমিকের মধ্যে ১৫৮ জন শ্রমিককে রাষ্ট্রদূতের বহুমুখী কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মুক্তি দেয়। তবে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম এর দাবি দূতাবাস তাদেরকেও মুক্তির জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
প্রশ্ন, প্রবাসীরা এমন অন্যায় কাজটি কেন করলেন? তারা কি জানেন না কুয়েত পুলিশ এহেন কর্মের জন্য তাদেরকে নাস্তানাবুদ করবে। প্রবাসীরা জানেন কুয়েতের আইন খুবই কড়া। অপরাধ করে কেউ বাঁচতে পারে না। তারপরও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আসলে এই ভাঙচুরের নেপথ্যে কী ছিল? এই বিষয়ে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। কুয়েত দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা। তাদের বিরুদ্ধে প্রবাসীদের রয়েছে হাজারো অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসহযোগিতার ক্ষোভ।
বেশ কয়েক মাস আগে এমনই একটি ঘটনা ঘটে প্রবাসী নাহিদের সঙ্গে। নাহিদের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশা থানায়। বর্তমানে তিনি লেসকো কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি জানান, এই কোম্পানিতে চাকরি নেয়ার আগে অন্য একটি কোম্পানিতে আমার খুব ভালো বেতনের চাকরির সুযোগ ছিল। কিন্তু এর আগে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য দূতাবাসে জমা দিই। ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দেয়ার কথা। কিন্তু সেই পাসপোর্ট এক মাসেও পাইনি। অ্যাম্বাসিতে যোগাযোগ করলে উল্টো তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার কওে তাড়িয়ে দেয়। ওই চাকুরীতে যোগ দিতে না পারে নিরুপায় হয়ে যোগ দেই এই লেসকো কোম্পানীতে। এখন ফেরারী আসামীর মতো পালিয়ে বেরাচ্ছি।
প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুয়েত দূতাবাস ভাঙচুরের ঘটনার আগে প্রবাসীরা তাদের দুর্দশার কথা একাধিকবার জানিয়েছেন। কিন্তু দূতাবাস এই সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বৃহস্পতিবার দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা উল্টো তাদের সঙ্গে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আচরণ করেন। খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন। একপর্যায়ে তারা দূতাবাস ভাঙচুর করেন। এটা নিঃসন্দেহে অন্যায় কাজ। তবে এই ঘটনার জন্য শুধু কি প্রবাসীরাই দায়ী? দূতাবাস কর্মকর্তাদের কি কোনো দায় নেই? তারা মোটেও এর দায় এড়াতে পারেন না। চার মাস বেতন না পেলে কারো মাথাই ঠিক থাকে না। হয়তো তারা প্রথমে একটু উচ্চবাচ্য করেছেন। কিন্তু কেন করছেন সেটাও তাদের ভাবা উচিত ছিল। কিন্তু তারা পাত্তাই দেননি। বরং তাদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছেন। একপর্যায়ে তারা দূতাবাস ভাঙচুর করেছেন। আর কর্মকর্তারা পুলিশ ঢেকে তাদেরকে হেনস্তা করেছেন।
কুয়েত প্রবাসী হজরত আলী। কুয়েতের লেসকো কোম্পানিতে চাকরি করেন। ৮ লাখ টাকা খরচ করে পরিবারের সুখের জন্য প্রবাসে এসেছেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পরে ঘটে নানা বিপত্তি। গত চার মাস ধরে তার বেতন হয় না। ফলে দেশে থাকা পরিবারের জন্য পাঠাতে পারছেন না কোনো অর্থ। শুধু কি তাই। তিনি যেখানে থাকেন সেই ব্যারাকে নেই পানি, রুমে নেই বিদ্যুৎ, খাদ্য নেই। ফলে অনেকটা অনাহারেই দিন কাটছে তার। গত ১৭ই জানুয়ারি সকালে এমন দুর্দশার কথা জানাতে অন্যদের সঙ্গে যান নিজ দেশের অ্যাম্বাসিতে। কিন্তু অ্যাম্বাসি কর্মকর্তাদের তাদের দুর্দশার কথা শোনার সময় নেই। নামকাওয়াস্তে তাদের কথা শুনে চলে যেতে বলেন। ফলে উত্তেজিত হন উপস্থিত প্রবাসীরা। কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ঘেরাও করার আগে হজরত আলীর মতো আরো অনেকেই ফেসবুকে লাইভে তাদের এমন দুর্দশার কথা জানান।
এসব লাইভে তারা জানান, সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ করে কুয়েতে এসেও আমরা ভালো নেই। বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির ব্যবহার আমাদের ঘাড় ধাক্কা মেরে বাইরে ফেলে দিচ্ছে। দয়া করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি আমাদের সুব্যবস্থা করেন।
তারা বলেন, লেসকো কোম্পানির জালিয়াতি সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ওরা আমাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করছে না। আমাদের আকামা নেই। থাকা ও খাওয়াার জায়গা নেই। অথচ বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির কাছে কোনো বিচার পাচ্ছি না। প্রবাসীদের টাকা নিয়ে তারা রাজকীয় জীবনযাপন করেন। অথচ আমাদের খোঁজ নেয়ার সময় তাদের পা মাটিতে পড়তে চায় না। এ অবস্থার অবসান চাই।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী জেনারেল
সেভ দ্য সোসাইটি এন্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম